ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার হাজিরা দিতে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে যাবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলে বেগম জিয়া সকাল ১০টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন বেগম জিয়া।
রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এর আগে গত ২৬ অক্টোবর দুই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিশেষ আদালতে আংশিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়া। আদালত ২ নভেম্বর পুনরায় শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন। এদিনও খালেদা জিয়া তার বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে।
এর আগে ১৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করে এক লাখ টাকার মুচলেকায় জামিন পান সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়া দুদফা আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন। বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে থেকেই লন্ডনে অবস্থানের সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় গত ৯ অক্টোবর বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন বেগম। আর ১২ অক্টোবর মানহানির মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম নূর নবী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এর আগে ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাজধানীর বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া বক্তব্যের মাঝে সরকারের নিষ্ঠুরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কথা স্মরণ করে কেঁদে ফেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এ দিন বেগম খালেদা জিয়া দুপুর ১২টা ১৩ মিনিট থেকে ১টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, মাননীয় আদালত, আপনি নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা দায়ের করা হচ্ছে। জারি করা হচ্ছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। প্রায় চার দশকের স্মৃতিবিজড়িত বসতবাড়ি থেকে আমাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
আমাকে আমার বাসা ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে বালির ট্রাক দিয়ে কয়েক দফায় দীর্ঘদিন অবরোধ করে রাখা হয়েছে। আমি আমার অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় সে সময় বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
সেই অবরুদ্ধ অবস্থাতেই আমি মৃত্যু-সংবাদ পাই বিদেশে চিকিৎসাধীন আমার একটি সন্তানের (ছোট ছেলে কোকো)। আর সেদিনই আমার এবং আমার সঙ্গে অবরুদ্ধদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ করা হয়, রাস্তায় গাড়ি পোড়ানো এবং বিস্ফোরক দিয়ে মানুষ হত্যার। অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায়ই নাকি আমরা এসব করেছি। এগুলো কি কোনো সভ্য ও মানবিক আচরণ?
এরই মধ্যে তিনি কেঁদে ফেলেন। আদালতে উপস্থিত অনেকের চোখে পানি ঢলমল করতে দেখা যায়। এসময় অন্যরকম দৃশ্যের অবতারণা হয়। কিছুক্ষণ নীরবতার পর চোখের পানি মুছে বেগম জিয়া ফের বক্তব্য শুরু করেন।