শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান, ১৪৪৫ | ১২:২৪ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৭:৪৪ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

শিল্পী বারী সিদ্দিকী সম্পর্কে অজানা তথ্য

ঢাকা: প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকীকে নিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন হবিগঞ্জ জজকোর্টের আইনজীবী ও সাংবাদিক এম এ মজিদ। স্ট্যাটাসটিতে তিনি শিল্পী বারী সিদ্দিকী সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন। যার মধ্যে বারী সিদ্দিকীর কিছু বিখ্যাত গান রচনার প্রেক্ষাপটও তুলে ধরা হয়েছে। শীর্ষ নিউজের পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘অনেকের ধারনা যারা বাউল শিল্পী কিংবা লোকজ সংগীত করেন তাদের বেশির ভাগ স্বল্প শিক্ষিত বা স্বশিক্ষিত। যদি আপনি এব্যাপারে অনুসন্ধান করেন তাহলে আপনার ধারনা পাল্টে যেতে বাধ্য। ১৯৯৯ সনে মাঝে মাঝে বারী সিদ্দিকীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় দেখা যেত সন্ধ্যার পর। তখনও এতোটা জনপ্রিয় তিনি ছিলেন না। হুমায়ুন আহমেদ এর কয়েকটি গানে তিনি সবে মাত্র কন্ঠ দিয়েছেন, বাশি বাজিয়েছেন। শ্রাবন মেঘের দিনে ছবিতে তিনি গানে কন্ঠ দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। আমি একবার সন্ধ্যার পর শাহবাগ এলাকায় বারী সিদ্দিকীকে দেখেছি। অনেক মানুষের মধ্যে তার গলার আওয়াজটাই আলাদা। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ তার বাশির ভক্ত, গানের ভক্ত। বারী সিদ্দিকীর আদলে গান গেয়ে অনেকেই আজ জনপ্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকারী বারী সিদ্দিকীর মেয়ে এ্যালমা সিদ্দিকী বিদেশে পড়াশুনা করেছেন। এ্যালমা সিদ্দিকীও একজন বাউল শিল্পী। বাবার সাথে একাধিকবার একই মঞ্চে একই টিভি শোতে গান করেছেন এ্যালমা সিদ্দিকী। ২ ভাই এক বোনের মধ্যে বারী সিদ্দিকী সবার ছোট। ১৯৫৪ সালে নেত্রকোনা জেলায় তার জন্ম। এ্যালমা সিদ্দিকী বলেছেন-তার বাবার উপার্জনের প্রায় সবটুকুই বাড়ি নির্মাণে ব্যয় করেছেন। নেত্রকোনা জেলায়ই বারী সিদ্দিকীর বাড়ি। বাড়ির নাম বাউল বাড়ী। “তুমি আইও পরানের বন্ধু আইও বাউল বাড়ী” শিরোনামে একটি গানও রয়েছে তার। নারী কন্ঠের গানটি বারী সিদ্দিকী গাইয়েছেন তার মেয়ে এ্যালমা সিদ্দিকীকে দিয়ে। আর “শুয়াচান পাখি” গান শুনে পুরো স্টেজের অনেকেই কেদেছেন এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। “শুয়াচান পাখি, আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ না কি” গান সম্পর্কে বারী সিদ্দিকী বলেছেন- আব্দুর রশিদ নামের এক বাউল শিল্পী গান করতে গঞ্জে যান। এসে দেখেন তার স্ত্রী মারা গেছেন। লাশ কবরে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। কবরে লাশ রেখে ওই বাউল নিজের অজান্তেই স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে গানটি গেয়েছেন। সেই গানটি দেশের সেরা গানে পরিণত হয়েছে বারী সিদ্দিকীর কন্ঠে। বারী সিদ্দিকী একমাত্র বংশীবাদক যিনি জেনেভার একটি কনভেনশনে বাশি বাজানোর জন্য দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বারী সিদ্দিকীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল “আপনার বেশির ভাগ গান বিরহের, কোন্ অতৃপ্তি থেকে আপনি এসব গান গেয়েছেন?” জবাবে বারী সিদ্দিকী জানান- আমার কোনো দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, আমি কোনো কিছু হারাইনি। বরং আমি যা পেয়েছি তা অনেক বেশি। এতো কিছু না পেলেও হতো। বারী সিদ্দিকীর কোনো অতৃপ্তি কি আছে? না, এক্ষেত্রেও বারী সিদ্দিকী জানান-আমার কোনো অতৃপ্তি তো নাই ই, বরং দেশবাসী আমাকে যা দিয়েছে, এর কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। “আমার গায়ে যত দুঃখ সয়” গানটি বারী সিদ্দিকীর অনবদ্য সৃষ্টি। অনেকে বলে থাকেন- বারী সিদ্দিকীর একটি খারাপ নেশা রয়েছে। নিজেকে লুকাননি বারী সিদ্দিকী। তিনি গান রচনা করেছেন “আমার মন্দ স্বভাব জেনেও তুমি, কেন চাইলে আমারে, এতো ভাল হয় কি মানুষ নিজের ক্ষতি করে”। এই গানটি সম্পর্কে বারী সিদ্দিকী বলেছেন “ গানটি আমার জন্য তৈরি করেছিলাম। অনেকে গানটি না গাওয়ার কথা বলেছিলেন। উপ মহাদেশের কেউ এভাবে নিজের মন্দ স্বভাব বলে গান করেনি। আমি করেছি, ভাবলাম আমার জন্য গানটি করেছি, আমিই শুনব, সেই গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে”। বংশীবাদক বারী সিদ্দিকীর শতশত বাশি আছে। মৃত্যুর পর বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাশির কী হবে। এনিয়ে একটি গান করেছেন বারী সিদ্দিকী। বলেছেন- আমার অনেক বাশি আছে। মৃত্যুর পর লাশ কবরে রাখার সময় কিছু বাশের প্রয়োজন হয়, কেন বাশের চাটাই দেবেন, আমার বাশি দিয়েই চাটাই বানিয়ে দেয়া যাবে। তা না হলে বাশি দিয়ে ভেলা বানিয়ে আমার লাশটি জলে ভাসিয়েও দেয়া যাবে। শুধু বাশি বাজিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শতশত শ্রোতাকে বসিয়ে রাখার এক জাদুকর বারী সিদ্দিকী। “ও রজনী অইছনা অবসান, আজ নিশিতে আসতে পারে আমার বন্ধু কালা চান” গান শুনে কে না স্তব্দ হয়ে থাকতে পারে। কী সুর, কী কথা। বারী সিদ্দিকীর কন্ঠে “এই পৃথিবী যেমন আছে, তেমনি রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে” কিংক্ষা “বিধি তোমার এমনই রায়, আপিল করার জায়গা নাই” বা “দয়াল তুমি আছ কোথায়, একজনেও দিল না স্বাক্ষী, তবুও কেমন প্রেমে পড়লাম, না দেখেও তোমারে ডাকি” এসব গান কী শুধুই গান? বারী সিদ্দিকীকে এসব গান নিয়ে গেছে আধ্যাত্বিক জগতে। বেশ কিছু দিন থেকেই নতুন বেশে বারী সিদ্দিকীকে জাতী দেখছে। লম্বা দাড়ি, পাঞ্জাবী, মাথায় টুপি। বারী সিদ্দিকী গুরুতর অসুস্থ। কয়েক বছর যাবতই তিনি অসুস্থ। তার ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। গত সপ্তাহে বারী সিদ্দিকী হঠাৎ হার্ট এ্যাটাক করলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তার চিকিৎসা চলে। বারী সিদ্দিকীকে দেখতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেউ হাসপাতালে গেছেন এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। সুর উঠেনি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার। কোনো অনুদানেরও ঘোষণা আসেনি। কয়েকটি টিভি চ্যানেল তার সংবাদ প্রচার করেছে মাত্র। মতের অমিল মনের অমিল ধ্যান ধারনার অমিল থাকতেই পারে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের বাউল সাম্রাজ্যে বারী সিদ্দিকী এক রাজা।’





আরো খবর