বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ০৬:৫৫:১১ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

প্রশ্ন কিনতে চাঁদা তুলে অভিভাবকদের তহবিল

রাজধানীর একটি স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা মিলে চাঁদা দিয়ে তৈরি করেছেন ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কেনার তহবিল। সেই তহবিল থেকে প্রতি পরীক্ষার আগেই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সংগ্রহ করা হয়। প্রশ্নগুলো চটজলদি সমাধানের জন্য রয়েছে শিক্ষকদের একটি দলও। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বেচার সঙ্গে যুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সোমবার এমন তথ্যই দিয়েছেন র‍্যাব-৩-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। র‍্যাব বলেছে, গতকাল ভোর চারটা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে ওই ৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় পরীক্ষা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে তাঁদের একজনের মুঠোফোনে জীববিজ্ঞানের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র চলে আসে। গতকাল রাজধানীর উত্তরখান ও গাজীপুর থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বেচাকেনার অভিযোগে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁদের বিষয়ে জানাতে গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে চারজনই শিক্ষক। তাঁরা হলেন-উত্তরখানের কাচকুড়ার ক্যামব্রিজ হাইস্কুল নামের একটি বেসরকারি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তানভীর হোসেন (২৯) ও সজীব মিয়া (২৬) এবং সৃজনশীল নামের একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক মো. ইব্রাহিম (২১) ও এনামুল হক (২৭)। গ্রেপ্তার আরেকজন হাসানুর রহমান (২৯) উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের ছাত্র। অনলাইনে রকিভাই নামে পরিচিত হাসানুর চার বছর ধরে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন অনলাইনে বেচে আসছেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব। সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছে গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত জীববিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও পাওয়া গেছে। তাঁরা সকাল আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে সমাধান করা প্রশ্নপত্র তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিতেন। হাতে লেখা গণিতের একটা প্রশ্নপত্র তাঁদের কাছে পাওয়া গেছে, যেটি পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযানে যুক্ত র‍্যাব-৩-এর কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেন, ক্যামব্রিজ নামের উত্তরখানের সেই স্কুলটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। কিন্তু সেটিতে এসএসসি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রয়েছে। তারা মূলত অন্য স্কুল থেকে এই শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় নিবন্ধন করায়। এই স্কুল ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষকেরা পরীক্ষার আগে পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছাকাছি এক বা একাধিক বাড়ি ভাড়া নেন। তারপর পরীক্ষার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আগে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হাতে আসার পর সেই ভাড়াবাড়িগুলোতে চটজলদি প্রশ্নের সমাধান বের করেন তাঁরা। এরপর নিজেদের শিক্ষার্থীদের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) অংশের উত্তরগুলো মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠানো হয়। এর জন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে আগেই তহবিল সংগ্রহ করে রাখা হয়। তবে সৃজনশীল অংশের ক্ষেত্রে তাঁরা একটা ‘শর্ট সাজেশন’ দিয়ে থাকেন, যেখান থেকে ৩০ শতাংশের মতো প্রশ্ন আসে। র‍্যাবের কর্মকর্তারা বলেন, হাসানুর রহমান নামের এই যুবক চার বছর ধরে অনলাইনে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বেচার সঙ্গে যুক্ত। ফেসবুকে তাঁর রকিভাই নামে আইডি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন ধারণা প্রচলিত, ‘রকিভাই’য়ের প্রশ্ন শতভাগ আসল। গতকাল ভোরে হাসানুরকে গ্রেপ্তারের পরও তাঁর মুঠোফোনে পরীক্ষার দেড় ঘণ্টা আগে জীববিজ্ঞানের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র চলে আসে। প্রত্যেক পরীক্ষার জন্য হাসানুর পৃথক গ্রুপ খোলেন। যেমন গণিতের জন্য ‘মজা’, ইংরেজির জন্য ‘আড্ডা’, ‘ব্লাড ডোনেশন-১’ ইত্যাদি নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলো খোলা হয়। যাঁরা পরীক্ষার আগের রাতে হাসানুরকে ৫০০ টাকা অগ্রিম দেন, তাঁদেরই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করা হয়। এখনো উৎসে যাওয়া যায়নি সংবাদ সম্মেলনের পর র‍্যাব-৩-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, এখনো তাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎসে যেতে পারেননি। জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রশ্ন বহনের যে প্রক্রিয়া তাতে ফাঁস বন্ধের সুযোগ খুবই কম বলে মনে করেন র‍্যাব-৩-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে গজিয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কেউ কেউ এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। র‍্যাব জানিয়েছে, চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র বেচাবিক্রির সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে এখন পর্যন্ত তারা সারা দেশে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে সরাসরি প্রশ্ন ফাঁস করেছেন এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।





আরো খবর